সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:৩৪ পূর্বাহ্ন
বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি:: আমকে ঘিরে উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে রাজশাহীর বাঘায়। অনলাইন ভিত্তিক বেচা-কেনার আম ছাড়াও উপহার কিংবা আত্মীয় স্বজনের বাসায় পাঠানোর ফলে ব্যবসা জমে উঠেছে কুরিয়ার সার্ভিসগুলোয়। কুরিয়ার অফিসের সামনে দেখা গেছে মৌসুমী আমে ঠাসা মোটা পলিথিন ও পেপারে মোড়ানো ঝুড়ি-কার্টুনগুলো। এসব আম পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়।
জানা যায়, উপজেলায় আম পরিবহনে যুক্ত হয়েছে অন্তত ১০ টি কুরিয়ার সার্ভিস। মৌসুম শুরুর পর, দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন প্রায় হাজার মণ আম যাচ্ছে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে। এসব আমের বেশিরভাগই অনলাইনে অর্ডার নেওয়া। এছাড়াও উপহার কিংবা আত্মীয় স্বজনের বাসায় পাঠাচ্ছেন অনেকে। প্রাপকের কাছে পৌঁছাতে ব্যবহার করা হচ্ছে কুরিয়ার সার্ভিস। ব্যস্ত সময় পার করছেন আম প্রেরক-কুরিয়ার সার্ভিসের লোকজন। ব্যবসাও ভালো চলছে কুরিয়ার সার্ভিসগুলোতে।
বুধবার (২১ জুন) সরেজমিন কুরিয়ার সার্ভিসেগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, কার্টুন ভর্তি আমে ঠাসা। অনলাইনে যারা আম কিনেছেন এবং চাকরি কিংবা অন্য কোন কারণে আমের উৎসবে যোগ দিতে পারেননি, তাদের কাছে এসব আম পৌঁছে দিচ্ছে কুরিয়ার সার্ভিস। আর বাড়িতে বসে বাঘার সুস্বাদু আমের স্বাদ গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন ক্রেতা কিংবা আত্মীয় স্বজন।
কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যবস্থাপকরা জানান, প্রতিবছর উপহার কিংবা আত্মীয় স্বজনের কাছে আম পাঠানো হয়। তবে এবছর অনলাইন ভিত্তিক আম বেচা কেনা হচ্ছে অনেক বেশি। গত বছরের তুলনায় এবার তাদের ব্যবসাও অনেক ভালো হচ্ছে। গড়ে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার মণ আম যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বাঘা উপজেলার অনেক তরুণ উদ্যোক্তা অনলাইনের মাধ্যমে আম বিক্রি শুরু করেছেন। আমের ব্যবসার জন্য অনলাইনের ব্যবহার দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। গ্রুপ ভিত্তিক আম বেচা কেনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন একঝাঁক তরুণ। এদের অধিকাংশই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
এবার অনলাইনে আম ব্যবসা শুরু করেছেন এমন কয়েকজন নতুন উদ্যেক্তা জানান, মৌসুম শুরুর পর অনলাইনে মার্কেটপ্লেস ও ফেসবুক পেজ দেখে আম নেওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রেতাদের ফোন পাচ্ছেন। ক্রেতাদের অর্ডার পেয়ে চাষীদের বাগান থেকে সরাসরি আম কিনে কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠাচ্ছেন তাঁরা। তবে কুরিয়ার খরচ কম হলে তাঁদের সুবিধা হতো বলে মত তাঁদের। বাজুবাঘা গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা ডলার আহম্মেদ, “রাজশাহী ম্যাংগো প্রোডাক্টস’’ এর তানজিম হাসান স্বদেশ,‘রাজশাহী হিমসাগর ডট কম’ এর মেহেদী হাসান বলেন, বাড়িতে অলস বসে না থেকে ফেসবুকে পেজ খুলে অনলাইনে আম ব্যবসা শুরু করেন। গুনগত মান দেখে এলাকার বাগান মালিকদের কাছ থেকে কেনা আম কার্টুন প্যাকিং করে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে গ্রাহকের নিকটস্থ কুরিয়ার সার্ভিসে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। অনেকেই হোম ডেলিভারি দায়িত্ব নিয়ে আম পৌছে দিচ্ছেন বাসায়। মোটা পলিথিন ও পেপারে মোড়ানো কার্টুন ভর্তি আম নিয়ে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে আসেন আব্দুল হালিম। সেই আম চুয়াডাঙার আলমডাঙা উপজেলায় বোন-ভগ্নিপতির বাসায় পাঠাবেন বলে জানান।
তিনি বলেন, ‘আমের সময়ে আম কেনা-বেচা আর পাঠানো নিয়ে অনেক ব্যস্ত থাকতে হয়। আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুরাও চেয়ে থাকেন কখন আসবে রাজশাহীর বাঘার আম। আম পেয়ে তারা যেমন খুশি হন, ঠিক তেমনি ভালো লাগে তাদের কাছে আম পাঠাতে পেরে। আমের মৌসুমে এটা যেন একটা রুটিন হয়ে গেছে।
বাঘা শাখার, সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যবস্থাপক জহুরুল ইসলাম ও এজেআর কুরয়িার সার্ভিসের ব্যবস্থাপক আশরাফ আলী বলেন, অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় আমের মৌসুমে তাদের ব্যবসাটা অনেক ভালো চলে। তার সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে অনলাইন ভিত্তিক আম বেচা কেনা। এতে তাদের ব্যবসা আরো জমে উঠেছে। তারাও চেষ্টা করেন ভালো সার্ভিস দেওয়ার। সার্ভিস চার্জ হিসাবে তারা নিচ্ছেন, ঢাকাসহ উত্তরবঙ্গের মধ্যে কেজি প্রতি ১২ টাকা আর ঢাকার বাইরে প্রতিকেজি ১৬ টাকা করে। সওদাগর কুরিয়ার সার্ভিস ঢাকাসহ উত্তরবঙ্গের মধ্যে নিচ্ছে কেজি প্রতি ১১ টাকা আর ঢাকার বাইরে প্রতিকেজি ১৩ টাকা করে।